মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাশুল উপন্যাস

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাশুল উপন্যাস। যা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাঁচটি উপন্যাসে জীবন ও সমাজ এর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসে বিষয় বৈচিত্র্য এর অন্তর্ভুক্ত।

 

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাশুল উপন্যাস

 

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাশুল উপন্যাস

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবিতকালে প্রকাশিত শেষ উপন্যাস ‘মাওল’ (১৯৫৬)। ‘মাণ্ডল’ উপন্যাসটি মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া ভুল এবং সেই ভুলের মাওলকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে। কৈশোরে একটি ভুল করে রানীকে তার মাশুল দিতে হয় যৌবন পর্যন্ত। এরকম বরেণ রসময় এরাও ভুল করে সারাজীবন মাশুল দেয়। ভুলের মাশুল দিতে হয় সুনীলকেও।

উপন্যাসে লেখক মানুষের বিধাগ্রস্ত মনের জটিলতা এবং ভুল করা দেখিয়েছেন। উপন্যাসের শুরু হয়েছে দুটি বন্ধু পরিবারের কথা দিয়ে। রানীদের পরিবার আর সাধনের পরিবার। কৈশোরেই রানী আর সাধম বুঝতে পারে যে তারা প্রেমে পড়েছে। তাই তারা বিয়ে করতে চায়। এ ব্যাপারে একটি লম্বা চিঠি লেখে দুজন। চিঠিটি রানীর বৌদি মমতার হাতে তুলে দেয়। তবু দুই পরিবার চুপ করে থাকে।

 

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাশুল উপন্যাস

 

তারা সিদ্ধান্ত নেয় ওরা বড় হলে বিয়ে দেবে। কিন্তু রানীরা ক্ষেপে যায়, তারা দুজন সিদ্ধান্ত নেয় আফিম খেয়ে মরে যাবে। রানী নিজের জন্য আফিম আর সাধনের জন্য খয়েরের বড়ি নিয়ে যায়, কিন্তু ভুলে বড়ি বদল হয়ে যায়। তখন রানী রাজেন উকিলকে ডেকে আনে। রাজেন সাধনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সকলে বিষয়টাকে সহজভাবে নিলেও সাধন নেয় না, সে মনে করে রানী তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল।

কিছুদিন তাদের কথা বন্ধ থাকে, তারপর রানীর চেষ্টায় কথা শুরু হয়। কিন্তু তাদের প্রেম জমে ওঠে না। রাজেনের ভাই বরেনের সঙ্গে রানীর বোন নমিতার প্রেম হয়। নমিতা অন্তঃসত্ত্বা হলে বরেনের বউদি অমলা সাধনের কাছে সাহায্য চাইতে এসে কোনো সুরাহা করতে পারে না। অমলা ওদের বিয়ে দিতে চায়। কিন্তু বরেন ভাইয়ের ভয়ে আর ক্যারিয়ারের জন্য নমিতাকে বিয়ে না করে নার্সিং হোমে পাঠায়।

নমিতা বাড়িতে কিছু না বলে বরেনের পরামর্শে নার্সিং হোমে যায়। একটুর জন্য সে প্রাণে বেঁচে যায়। বরেনের ব্যবহারে নমিতার বউদি মমতা ক্ষুব্ধ হয়। নমিতাও লেখাপড়ায় নিজের মধ্যে ডুবে থাকে, আর গল্প কবিতা লিখতে শুরু করে। নমিতা মমতাকে বলে

“বিয়ে আমি কোনো দিন করবো না। যদি বা করি, একটা মুচি মেথরকে বিয়ে করব- তোমাদের ওই বজ্জাদকে নয়। ” (১০, পৃ-৩৯৪)

 

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাশুল উপন্যাস

 

এরপর সে রানীর বান্ধবী পুর্ণিমার খবরের কাগজের অফিসে যায়। গল্প কবিতা লিখে মাসে একশ টাকা রোজগার শুরু করে সে। এরপর অন্য কাগজে লিখে বাড়তি আয় করে। মমতা নমিতার বিয়ে ঠিক করে নবেন্দুর সঙ্গে। নবেন্দু নমিতাকে জানায় যে সে নমিতার সবকিছু জানে এবং তাকে কোনো বিধি-নিষেধ করবে না। ওদের বিয়ে হয়। অন্যদিকে সাধন নির্লিপ্ত ।

সাধনের বন্ধু সুনীল হঠাৎ প্রেমে পড়ে গোয়ালা বালার। সে নিজের মনে কোনো উত্তর খুঁজে পায় না। তাই সন্ধ্যায় সাধন আর রানীকে দাওয়াত করে। সেখানে সাধন আর সুনীল প্রমাণ পায় সাধনের জন্য রানির ঠিকই দরদ আছে। এরপর সাধন বোম্বেতে বড় চাকরি পেলে একদিনের মধ্যে সাধন আর রানির বিয়ে হয়ে যায়।

জীবনে যত দুঃখ-কষ্ট আসুক মানুষ তার পথ খুঁজে আশার আলো জ্বালবে, প্রয়োজন হলে ভুলের মাণ্ডল দিয়ে নিজেকে শুধরে নেবে- এটাই এ উপন্যাসে লেখক দেখিয়েছেন।

Leave a Comment